রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
১১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডুমুরিয়ায় ড্রাগন ফল বাগানে ড্রিপসেচ পদ্ধতিতে চাষ করে সফলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ১১, ২০২৫

ডুমুরিয়ায় ড্রাগন ফল বাগানে ড্রিপসেচ পদ্ধতিতে চাষ করে সফলতা
ডুমুরিয়া প্রতিনিধিঃ
ডুমুরিয়ায়  নবলোক পরিষদ এর বাস্তবায়নে কৃষি ইউনিট (কৃষি খাত) এর আওতায় পানি সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে ফসল চাষ প্রদর্শনী খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতিয়া এলাকায় ২০ শতক জমিতে কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক ড্রাগন ফল বাগানে ড্রিপসেচ পদ্ধতিতে চাষ করে তাক‌ লাগিয়ে দিয়েছেন।
অর্থায়নে : কৃষি ইউনিট, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)
ড্রাগন ফল মূলত আমেরিকার প্রসিদ্ধ একটি ফল যা বর্তমানে আমাদের দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে এই ফলের বিভিন্ন জাত আনা হয়। ড্রাগন ফলের গাছ এক ধরনের ক্যাকটাস জাতীয় গাছ। এই গাছের কোন পাতা নেই। ড্রাগন ফলের গাছ সাধারনত ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সিটিউট (বারি) কতৃক উদ্ভাবিত ড্রগন ফলের নতুন জাতটি হলো বারি ড্রাগন ফল-১ যা দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়াতে জনপ্রিয় ফল। এ ফলের আকার বড়, পাকলে খোসার রং লাল হয়ে যায় , শাঁস গাঢ় গোলাপী রঙের, লাল ও সাদা এবং রসালো প্রকৃতির । ফলের বীজগুলো ছোট ছোট কালো ও নরম । একটি ফলের ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

নবলোক পরিষদ এর কৃষি ইউনিট পিকেএসএফ এর  আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল ও উচ্চ মূল্যের বিভিন্ন নতুন ফসল জাত, ধানের জাত, নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও বিপণণ, জৈব বালাইনাশক ও জৈব সারের সঠিক ব্যবহার সৃজন, উচ্চ মূল্যের ফল উৎপাদনে উদ্যোক্তা তৈরি, বসতবাড়িতে সবজি চাষ, গ্রীষ্মকালীন টমেটো ও তরমুজ চাষ, ট্রাইকো কম্পোষ্ট সার তৈরি ও এর ব্যবহার ইত্যাদি সম্পর্কে সদস্যদের ধারণা প্রদান ও প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করছে। এছাড়াও সবজির বীজ, ফেরোমোন লিউর বিতরণ, ফ্রুট ব্যাগ বিতরণসহ নানাবিধ উপকরণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, খুলনা অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে, ক্ষেতে প্রয়োজনীয় সেচ দেওয়া কৃষকদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে । এক্ষেত্রে ড্রিপ সেচ পদ্ধতি আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি হিসেবে অত্র অঞ্চলের জন্য একটি উপযুক্ত প্রযুক্তি। এছাড়া ড্রাগন ফল যেহেতু উচ্চ মূল্যের ফল, সেহেতু এই ধরনের ফল বাগান গুলো ভালভাবে যত্ন নিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
ড্রাগন ফলের কাটিং থেকে চারা রোপনের পর ১ থেকে ১.৫ বছর বয়সের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। ফল যখন সম্পূর্ণ লাল রঙ ধারণ করে তখন সংগ্রহ করতে হবে। গাছে ফুল ফোঁটার মাত্র ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়।
এব্যাপারে নবলোক পরিষদের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ হুমায়ুন কবির  বলেন, ড্রিপ সেচ এর মাধ্যমে ৭০% পর্যন্ত পানি সাশ্রয় করা যায়, ৫০% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করা যায়, শ্রমিক খরচ কম লাগে, সার পানির সাথে গুলে একসাথে গাছের গোড়ায় দেওয়া যায়, ফলে সারের অপচয় কম হয়, গাছের গ্রোথ ও ফলন ভালো হয় এবং ভূমিক্ষয় কম হয়। ড্রাগন ফল ক্যারোটিন সমৃদ্ধ থাকায় চোখ ভালো রাখে।
আঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় হজমে সহায়তা করে। এছাড়া আঁশ শরীরের চর্বি কমায়।
 এই ফলে বিদ্যমান প্রোটিন শরীরের যাবতীয় বিপাকীয় কাজে সহায়তা করে।
 ড্রাগন ফল চাষী নবদ্বীপ মল্লিক বলেন সুনিষ্কাশিত উঁচু ও মাঝারি উঁচু উর্বর জমি নির্বাচন করতে হবে এবং ২-৩ টি চাষ দিয়ে ভালোভাবে মই দিতে হবে।
চারা রোপণের জন্য বেড তৈরি করতে হবে। বেডের মাটিতে পচা গোবর , টিএসপি, এমওপি, জিপসাম এবং জিংক সালফেট সার ভালো করে মিশাতে হবে। 
বেড তৈরির পর চারা রোপণ করে বেডে ড্রিপ সেচ এর প্রয়োজনীয় উপকরণ, যেমন : পানির ট্যাংক, পানির মোটর, পাইপ, ভালভ, ড্রিপার ইত্যাদি ভালোভাবে ও স্থায়ীভাবে সেটআপ করতে হবে।  জমিতে প্রয়োজনীয় আন্ত:পরিচর্যায় ঠিক মত করলে এবং সার ও সেচ ঠিকমত প্রয়োগ করলে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। যেহেতু ড্রাগন গাছ লতানো এবং ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার লম্বা হওয়ায় সাপোর্টের জন্য গাছের মাঝে সিমেন্টের ৪ মিটার লম্বা খুঁটি পুততে হবে। প্রতিটি খুঁটির মাথায় একটি করে মটর সাইকেলের পুরাতন টায়ার মোটা তারের সাহায্যে আটকিয়ে দিতে হবে। তারপর গাছের মাথা ও অন্যন্য ডগা টায়ারের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরের দিকে ঝুলিয়ে দিতে হবে। কেননা এভাবে ঝুলন্ত ডগায় ফল বেশি ধরে । ড্রাগন ফল বাগানে এই ড্রিপ সেচ পদ্ধতিটি বাস্তবায়নে সার্বিক ভাবে নবলোক পরিষদ সহযোগিতা করেছেন ।
0 Comments